আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নয়াদিল্লি: মহাকাশে পাঠানো একটি স্যাটেলাইটের সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলার খবর নিশ্চিত করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগের জন্যে অত্যন্ত শক্তিশালী এই স্যাটেলাইটটি মাত্র দু’দিন আগে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিলো। এই GSAT-6A স্যাটেলাইটটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়েই তৈরি হয়েছে। ভারতে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ আরো উন্নত করার জন্যে এই স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয়েছিলো। খবর বিবিসির

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও সাংবাদিকদের বলেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে দুর্ভাগ্যজনক ত্রুটিকে দায়ী করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, হারিয়ে যাওয়া স্যাটেলাইটটির ওজন ২,০৫৫ কেজি। কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সংযোগ পুন-স্থাপনের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই স্যাটেলাইটটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৭০ কোটি রুপি।

মহাকাশে ভারতীয় এই স্যাটেলাইট পাঠানোর ঘটনাকে বিজেপি সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও টুইট করে এর সাথে জড়িত বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। স্যাটেলাইটের সাথে কর্তৃপক্ষের এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে দেখা হচ্ছে মহাকাশ অভিযানের প্রতিযোগিতায় ভারতের জন্যে বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে।

ভারত ২০১৪ সালে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে একটি মহাকাশ যান পাঠিয়েছিলো। প্রথম দফার চেষ্টাতেই তারা এটি করতে সক্ষম হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহাকাশে একবারে বিভিন্ন আকারের ১০৪টি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলো ভারত। এর আগে রাশিয়া ২০১৪ সালে একবারে এরকম ৩৭টি উপগ্রহ পাঠিয়েছিলো।

কাশ্মীর ভারতবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসছে
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ১১ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হওয়ার পর ভারতবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসছে রাজ্যটি। কাশ্মীরের দুটি জেলায় অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে এসব বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন বলে জানান কাশ্মীর পুলিশের প্রধান সায়েম প্রকাশ।

এ ছাড়া এ ঘটনায় আরও দুই বেসামরিক নাগরিক ও দুই জওয়ান নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পরপরই রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার নাগরিক। ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা। খবর আলজাজিরা ও ইকোনমিক টাইমসের।

রবিবার ভোররাতে কাশ্মীরের শোপিয়ান ও অনন্তনাগ জেলায় অভিযান চালায় পুলিশ। শোপিয়ানে বিদ্রোহীদের দুটি দল লুকিয়ে আছে- এ খবর পাওয়ার পরই রাতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। সেনার গুলিতে শোপিয়ানের দ্রাগ্গারে মৃত্যু হয় সাতজনের।

শোপিয়ানেরই কাচদোরায় সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন। এখানেই বিদ্রোহীদের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারান দুই জওয়ান। পাশাপাশি, শনিবার ভোররাত থেকে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগের দিয়ালগাম এলাকায় সেনা-বিদ্রোহী গুলির লড়াই শুরু হয়। সেখানে নিহত হন আরও এক বিদ্রোহী ও দুই বেসামরিক। এক বিদ্রোহীকে আটকও করেছেন সেনাসদস্যরা।

পুলিশ জানিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পরিবারের সদস্যরা তাদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ করে। একজন আত্মসমর্পণ করলেও অপরজন প্রত্যাখ্যান করে। পরে গুলিতে সে নিহত হয়।

বিচ্ছিন্নতাবাদী মৃত্যুর প্রতিবাদে দক্ষিণ কাশ্মীরে রবিবার ও সোমবার বন্ধ ডেকেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী জেআরএল। সংঘর্ষের পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বানিহাল এবং শ্রীনগরের মধ্যে রেল পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। দক্ষিণ কাশ্মীরের কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে।

বিক্ষোভ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

বিদ্রোহী ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর প্রতিবাদস্বরূপ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিক। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করার ঘোষণা দেন।

শোপিয়ান জেলার বিক্ষোভ থেকে মানজুর আহমেদ বলেন, ভারতীয় সেনারা বেসামরিকদের ওপর তাজা গুলি ছুড়েছে। বহু যুবক তাদের গুলিতে আহত হয়েছেন। অনেকের চোখে ঠুকে গেছে ছররা গুলি।

তিনি আরও বলেন, ‘বহু বেসামরিক নাগরিকের ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যাওয়ায় তাদের রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। এই রক্তপাত আর কতদিন চলবে! আমরা ক্লান্ত।’ দুই জেলায় সংঘর্ষ চলাকালীনই বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর, বোতল ছুড়তে থাকে জনতা। বাহিনী পালটা গুলি, ছররা গুলি ছোড়ে ও টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়। হাসপাতাল সূত্রগুলো বলছে, এতে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।